ক. প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোনো পণ্যকে অন্য পণ্যে রূপান্তর এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়াকে প্রক্রিয়াজাতকরণ বলা হয়। যেসব প্রতিষ্ঠান তা করে থাকে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প নামে অভিহিত করা হয়। কৃষিজ বিভিন্ন পণ্যকে রূপান্তর করে বিভিন্ন চাহিদা সৃষ্টি করার জন্যে পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের দেশেও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠছে। এর ফলে কৃষিতে উৎপাদিত পণ্যের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ সারা বছর নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারে। যেমন, শিশু খাদ্য, দুধ জাতীয় খাদ্য, মাছ, মাংস, আখ, তরিতরকারি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য পণ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে নিরাপদ খাদ্য তৈরি করতে পারলে তা আমাদের সম্ভবনাকে আরও বিকশিত করবে। সেই সাথে দূষণ থেকেও মুক্ত থাকতে হবে এ ধরনের শিল্পকে।
খ. বাংলাদেশে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প
আমাদের দেশের মানুষ পূর্বে সনাতন পদ্ধতিতে কিছু কিছু খাদ্য দ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করতো। যেমন, মুড়ি, চিড়া, শুঁটকি, পিঠা, চাল, দই, মাঠা ইত্যাদি তৈরি করতো। এখন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে খাদ্য পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ যেমন অনেক গুণ বেড়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে।
সনাতন পদ্ধতির প্রক্রিয়াজাতকরণের সমস্যা
আধুনিক পদ্ধতির সুবিধা
কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণশিল্প প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশের মতো কৃষি প্রধান দেশের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য সামগ্রীর সর্বোচ্চ ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন পাটের বহুমুখী ব্যবহার উদ্ভাবনের ফলে মানুষ পাটের কাপড়, ব্যাগ, কারুশিল্প ইত্যাদি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছে। এর ফলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হতে পারে, অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উদ্যোক্তা ও কর্মীগণও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। পণ্যসামগ্রী ব্যবহারকারীগণও ঐসব পণ্য ব্যবহার করার সুবিধা পেতে পারে। পাটখড়ি থেকে পারটেক্স প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়েও দেশ লাভবান হতে পারছে। একইভাবে কৃষিজ পণ্য, চাল, আটা, ভুট্টা, টমেটো, আলু, দুধ, মাছ, মাংস, ইক্ষু, চামড়া, তুলা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে দেশে এখন নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠছে। যেমন, টমেটো সংরক্ষণ করার জন্যে কোল্ড স্টোরেজ তৈরি হচ্ছে। ক্রেতাগণ সারা বছর টমেটো ক্রয় করতে পারছে। মাছ থেকে এখন শুধু শুটকি নয়, টিনজাত করে তা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাচ্ছে, প্রয়োজন মতো খাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক ফল সংরক্ষণ এবং ফলের নানা ধরনের রসালো খাবার উদ্ভাবন করা হচ্ছে- যা দিয়ে সারা বছর মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। সরিষা ও তৈলজ শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈলজাতীয় সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। দুধের প্রক্রিয়াজাত শিল্প থেকে মিষ্টি, দই, মাখন, পনিরসহ শিশু খাদ্যের বিভিন্ন জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এখানে যে সব ফসল, প্রাণী, ফলজ, ফুলজ গাছ ও বীজের চাষাবাদ হচ্ছে তা ব্যাপকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে। বর্তমান দুনিয়ায় কৃষিজপণ্যকে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ঔষধসহ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ অনেক অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহার করা যাচ্ছে। আমাদের দেশ তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তবে অতিরিক্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। যেকোনো উন্নয়নকে হতে হবে টেকসই।
প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সমস্যা
সমাধানের উপায় (করণীয়)
কাজ-১: কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পগুলো চিহ্নিত কর। কাজ-২: কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সমস্যাগুলো চিহ্নিত কর। |
common.read_more